By - Asif Shakh

'একজন মায়াবতী' অথবা বারকোডিয়ান্সে পঁচানব্বই মিনিট এক. হুমায়ূন আহমেদের 'একজন মায়াবতী' বইটা নেড়েচেড়ে দেখছে মুনতাহা। সে আশ্চর্য! কেন আজ তাকে এই বইটা উপহার হিসেবে দেয়া হলো? তার ফেসবুক আইডির নাম- 'মিষ্টি মায়াবতী'! সে হয়তো এটা ভাবছে, 'মিষ্টি মায়াবতী'র কারণেই 'একজন মায়াবতী' বইটা! সে শুধুই হাসছে। তার চোখে মুখে যেনো আনন্দের চাপ! বইটা একটু আগে চট্টগ্রামের বাতিঘর থেকে কিনে চমতকার এক রেপিং করে তার হাতে দিলাম। বইয়ের প্রথম পেইজে ছোট্ট একটা চিরকুট। 'বইটা তোমার জন্য। প্রথম দেখার উপহার। তুমি আসলেই/সত্যি-ই মায়াবতী! তুমি অনেক সুন্দর। চলো, আমরা আজ থেকে শুরু করি দারুণ-দারুণ কিছু মুহুর্ত। চমকপ্রদ কিছু গল্প।' সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে তার গালের ভিতর করে ছোট্ট স্বরে 'থ্যাঙ্ক ইউ' বলেই আমার দিক থেকে চেহারা ফিরিয়ে নিলো। চাপা লজ্জাও তার ভিতর ভর করে আছে তখন। প্রথম দেখা বলে কথা! দুই. আমি সবসময়ই মুনতাহার পছদ অপছন্দের ব্যাপারটা রপ্ত করার চেষ্টা করতাম। সে কী ভালোবাসে, কী করতে পছন্দ করে, কোন টাইপের খাবার পছন্দ করে, কোথায় ঘুরতে যেতে পছদ করে; এসব। আমি সুকৌশলে তার কথার ফাঁকে ফাঁকে এসব বের করে আনতাম! সে প্রচুর মিন্ট লেমন জ্যুস পছন্দ করে। সে এই কথাটা অনেকভাবে আমার কাছে বলেছে। তাই আমি তার পছন্দের এই পানীয় খাওয়ানোর জন্য বারকোডিয়ান্সকেই বেছে নিয়েছিলাম! মুনতাহা স্ন্যাকস টাইপের খাবারের মধ্যে পিজ্জাও ভালোবাসতো! তিন. সেদিনের সন্ধ্যাটা ছিলো আমার জন্য রোমাঞ্চকর এক সন্ধ্যা! যেটার জন্য আমার অপেক্ষা অনেকদিনের। মুনতাহার সাথে আমার পরিচয়টা কাকতালীয়! একটা ম্যাগাজিনে আমার একটা লেখাকে কেন্দ্র করে আমাকে ফেসবুক থেকে খুঁজে নিয়েছিলো। সে আমার লেখাতে তার ভালোলাগার কথা জানিয়েছিলো। আমাদের পরিচয়টাও এভাবে। তবে কোনদিন ফেস টু ফেস দেখা হয়নি। তাই সেই সন্ধ্যাটা আমার জন্য ছিলো, চমকিত হওয়া আর শিহরণ জাগানিয়া! তার প্রতি কতই না ভালো লাগা ছিলো। কত করে চেয়েছিলাম, তাকে একবার দেখব। দেখা হতো না। শুধুই কথা হতো ফোনে কিংবা ম্যাসেঞ্জারে চ্যাটে! আমার দেখা করার আকুতি একদিন তার অন্তরে ঠিকই ঢুকে। বারকোডিয়ান্সে আজকের সন্ধ্যায় আমরা। কতই না ভালো লাগার একটা সময় ছিলো! চার. আমরা বারকোডিয়ান্সে বসে আছি। 'একজন মায়াবতী' বইটা তার সামনে রাখা। আমাদের সামনে তখন খাবার আসলো। ফ্রেঞ্চ ফ্রাইসহ একটা হার্টশেপ পিজ্জা, একটা ভার্জিন মজিটো আর একটা কফি! প্রথমেই কফিটা আমি টেনে নিলাম। ভার্জিন মজিটো আর পিজ্জা তার সামনে এগিয়ে দিলাম। সে বই পাওয়ার মতো আবারও অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো। আমাকে বললো, 'তুমি ক্যামনে জানো আমি এই খাবার দু'টো পছন্দ করি?' আমি হেসে জবাব দিলাম, 'আমি তোমাকে কিঞ্চিত মুখস্থ করে ফেলেছি। এখন বাকী বিষয়গুলোও মুখস্থ করার সুযোগ দিলে আমি খুশি হবো। কারণ সামনে আমাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে! তখন আমি যেনো বিজয়ের হাসি হাসছি। মুনতাহাকে তাৎক্ষণিক আমার উচ্ছ্বাস দেখানো না গেলেও, আমি ভিতরে ভিতরে তো মহা উচ্ছ্বসিত হচ্ছিলাম। একজন প্রেমিকের জন্য এর চাইতে সুন্দর মুহুর্ত আর কীইবা থাকতে পারে? সেই মিষ্টি সন্ধ্যায় আমরা এক ঘন্টা পয়ত্রিশ মিনিট অর্থাৎ পঁচানব্বই মিনিট একসাথে ছিলাম বারকোডিয়ান্সে! পাঁচ. রাতে ম্যাসেঞ্জারে ঢুকতেই দেখি কী সুন্দর একটা বার্তা। 'এত্ত সুন্দর একটা সন্ধ্যা উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সন্ধ্যা আমাদের জীবনে বারবার আসুক।