ভালোবাসা এমন এক তীব্র অনুভতি যা দুটি হৃদয়কে এক সুতোয় বেঁধে ফেলে। রূপ, রস, গন্ধবিহীন এই আবেগকে সঙ্গে নিয়ে মানুষ একসঙ্গে পথচলার শপথগ্রহণ করে। এ এমন এক আবেগের নাম, যার কারণে মানুষ ছুটে যায় অসমুদ্র হিমাচল পর্যন্ত অথবা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ভালোবাসা হলো তীব্র আবেগে মোড়ানো, ভাষায় প্রকাশ না করতে পারা ভীষণ ভালো লাগার এক স্পর্শকাতর অনুভূতির নাম। তাই তো বলা হয়, ভালবাসা, ভালবাসে শুধুই তাকে ভালবেসে ভালবাসায় বেঁধে যে রাখে। ভালবাসা হচ্ছে এক নির্ভরতা। মনটাকে আবিষ্কার করার এক খেলা। কারও মন দিয়ে মনকে ছুঁয়ে দেয়ার নামই ভালবাসা। জীবনে কাউকে ভালবাসার নামই আত্নসমর্পণ, কিন্তু সেখানে কোন গ্লানি নেই।কারণ, প্রকৃত প্রেমের সমর্পণে মানুষ হৃদয়ের বৃহৎকেই উপলব্ধি করতে পারে। ক্ষুদ্রতার লোভে ভালবাসা নয়, হীন আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পায়। ভালোবাসা এমন এক আবেগ, যেটি আমাদের নতুনভাবে ভাবতে শেখায়, স্বপ্ন দেখতে শেখায়, ত্যাগ-তিতিক্ষা-ধৈর্য শেখায়। ভালোবাসা শুধু প্রণয় থেকে হয় না। ভালোবাসা স্নেহ, মায়া, মমতা থেকেও আসে। যেমন মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক। অনেক সময় ভালোবাসা আসে শ্রদ্ধা, সম্মান থেকে। প্রণয় অর্থেই হোক আর মায়া-মমতা-সম্মান অর্থেই হোক, ভালোবাসা মানে হলো কারও ভালো চাওয়া। তাই তো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি গানের মতো করে মানব মন গেয়ে ওঠে, ‘ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখ তোমার মনেরও মন্দিরে’। ভালবাসা মানে শ্রদ্ধা, সমর্পণও। ভালবাসা মানে আত্মসুদ্ধিও, সেই সুদ্ধিটাও খুব দরকারী। আজকাল আমরা এতটাই অতি আধুনিক, সম্পর্ক ভাঙতে বা গড়তে সময় লাগে না, তাই সম্পর্কের সুতটাও ঠুনকো।একটু বাতাসেই তাসের ঘরের মত ভেঙে যায়। তাইতো সম্পর্ক গড়তে মনটাকে প্রাধান্য দেয়া জরুরী, নচেৎ সম্পর্কের সুতাটা হঠাৎই আলগা হতে শুরু হয়। যার সাথে সারা জীবন কাটানোর শপথটা নেয়া,যার সাথে পথ চলবার জন্য অঙ্গিকার করা, যার জন্য সারাদিন পরিশ্রম করা, সেই মানুষটির মনটা যে ভাল নেই তা আমরা বুঝতে সত্যিই ভুলে যাই। আমরা মাঝে মাঝে বুঝিই না, সে ভালো নেই। তাইতো একটা সময় অভিমানগুলো পাহাড় সম হয়ে যায়, প্রিয় মানুষটি দূরে যেতে যেতে হারিয়ে যায়। সে বুঝতে শিখে যায়- প্রতিবাদের চেয়ে নীরবতার ভাষা সহস্রগুণে বেশি ভয়ংকর। ক্যান্ডেল লাইট ডিনার, লং ড্রাইভ আর দামী দামী গিফটস দিয়েও তাই সংসার নামক মায়াজালের বন্ধন ভেঙে যায় নিমিষেই।