প্রেমটা করেছিলাম বিয়ের পাঁচ বছর আগে। সেই প্রেমের রেশ ধরেই আজ আমি ঘর ছাড়া। ঘর ছাড়া বলা ঠিক হবে না। রুম ছাড়া। আমার সোবার স্থান হয়েছে বেলকনিতে। অফিস থেকে ফেরার সাথে সাথে কোন কিছু বুঝে উঠার আগের আমার সনামধন্য হোম মিনিস্টার কথার হামলা শুরু করে দিলো। কি বলব, কোথা থেকে শুরু করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। হোম মিনিস্টারের কিছু বক্তব্য পেশ করা হোলো, -আমি জানি না, কি ভাবছ আমি কিছুই বুঝি না? অফিস থেকে দেরি করে ফেরা, রাতে ফোনে চ্যাটিং করা। আমি সব জানি আমি সব বুঝি। তোমার রুপা তাইনা। আজ থেকে রুপার সাথে গিয়ে থাকবা। আল্লারে আল্লা, এ কেমন মানুষ! পাঁচ বছর আগের প্রেম এখনও ভুলেনি। এখনও দেখা করে, ফোনে কথা বলে। আর মেয়েটিই বা কেমন? তোর বিয়ে হয়েছে তুই তোর স্বামীকে নিয়ে সুখে থাক। কেন আমার স্বামীটার মাথা খাচ্ছো। তোমার ঠাঁই নাই এই ঘরে। আমি ওকে হাত ইশারা দিয়ে একটু থামতে বললাম। ও থেমে গেল ঠিকই কিন্তু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আবার বলা শুরু করলো, -থামতে বললা কেন? আমাকে আজ কেউ থামাতে পারবে না। অনেক সহ্য করেছি আর না। এর একটা বিহিত করেই ছাড়ব। এই ঘরে হয় রুপা থাকবে নয়ত আমি থাকব। ও ওর মত করে বলেই যাচ্ছে। পরিবেশ মোটেই ভালো না। কিছুই বুঝতেছি না। আমি বিয়ে করার আগেই রুপার বিয়ে হয়ে যায়। রুপার বিয়ের পর আমাদের আর দেখা হয়নি। শুধু একবার ফোনে কথা হয়েছিলো। সেটাও আমার বিয়ের আগে। ভুলটা করেছি রুপার ব্যপারটা নীলিমাকে বলে। সততা দেখানোর জন্য যাহারা বউয়ের কাছে প্রাক্তনের কথা বলেছ তারাই মরেছ। কথায় কথায় রুপাকে নিয়ে আমাকে খোঁটা দিয়ে থাকে ও। তবে প্রতিদিনের ব্যপারটা দুষ্টুমি বলেই নিই আমি আর ও দুষ্টুমি করেই বলে। আজকের ব্যপারটা পুরা আলাদা। আজ ওর চোখ মুখ বলে দিচ্ছে এটা দুষ্টুমি না। ওর মত ও বকতে থাকলো আর আমি আমার মত ফ্রেশ হতে থাকলাম। একবার ভাবলাম খাবারটা নিজে নিয়েই খেয়ে নেই। কি জানি, ও খেয়েছে কিনা! ওকে খাওয়ার কথা বলার পরিবেশ নেই। আমিও আর খেলাম না। ভাবলাম পরিবেশ অনুকূলে আসলে দু'জনে একসাথে খেয়ে নিবো। এই ভেবে আমি বিছানায় উঠতে গেলাম অমনি নীলিমা বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। আমার দিকে আঙুল উঠিয়ে বলল, -এই বিছানায় তোমার জায়গা নাই। আজ থেকে বেলকনিতে থাকবা তুমি। যতদিন রুপা নামটি তোমার অন্তর থেকে মুছতে না পারবা ততদিন তুমি বেলকনিতে থাকবা। ওর চোখে মুখে আগুন ঝরছে। বউয়ের সাথে ঝগড়া করা আমার সংবিধানে নেই। থাকলে ঝগড়া বেঁধে যেতো। বাসর রাতেই ওকে বলেছিলাম, যখন দেখবা আমি রেগে আছি, তখন আমি দু'কথা বললেও তুমি চুপ থাকবা আর তুমি রেগে থাকলে আমি চুপ থাকবো। এই সূত্র মেনে চলার কারণে আমাদের মাঝে বড় কোন ঝগড়া বাঁধেনি আজ পর্যন্ত। আমি আর দেরি না করে একটি কাঁথা ও একটি বালিশ নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলাম। ওমা! বেলকনি প্রতিদিনের তুলনায় খুব চকচকা। যাক ভালোই হলো। দক্ষিণ দিক খোলা থাকার কারণে সুর-সুর করে বাতাস বইছে। দেহটা শীতল করে দিলো। কিন্তু মনটা শীতল করতে পারলো না। বসে বসে ভাবতে থাকলাম, কি এমন কারণ হতে পারে! বিয়ের পর আজ পর্যন্ত ওর এমন আচরণ আমি দেখিনি। বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না তাই উঠে দাঁড়ালাম। বেলকনির গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছি। মনটা ধীরে ধীরে খারাপ থেকে অধিক খারাপ হচ্ছে। হঠাৎ লক্ষ করলাম নীলিমা রুমের বাতি অফ করে দিয়েছে। বোধহয় সুয়ে পড়বে। কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম নীলিমার আলতো ছোঁয়া। আমার পিঠে মাথাটি রেখে জড়িয়ে নিয়েছে আমাকে। আমার অভিমানটা বেড়ে গেলো। আমাকে এত কষ্ট কেন দিলো ও! নয়নের অশ্রু আর আটকাতে পারলাম না। ও আমাকে টেনে মুখোমুখি দাঁড় করাতেই লক্ষ করলো আমার চোখে জল। ও আমার বুকে মাথা রেখে কেঁদে দিলো। আমি ওর চোখের জল মুছে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, -কি হয়েছে তোমার আজ? ও কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, আজ কতবার তোমাকে কল করেছি। তারপরও তুমি দেরি করে আসলে। অনেক মিছ করতেছিলাম। আসতে দেরি করেছ বলে ইচ্ছা করেই তোমার সাথে ঝগড়া করতে চাইলাম। কিন্তু আমি বুঝিনি তুমি এতটা কষ্ট পাবে। আমাকে ক্ষমা করে দাও। এবার একটু আহ্লাদী ভাব নিয়ে বলল, আমি আর একা থাকতে পারবো না। তুমি আমাকে একটা বাবু দাও। আমার একটা বাবু থাকলে তোমাকে আর বিরক্ত করব না। কথাটি বলেই লজ্জায় আমার বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলো। আমি আলতো করে কপালে একটি ভালোবাসা দিয়ে বললাম, মহারাণী তোমার প্রস্তাব সংসদে পাস হয়েছে। এবার কিছু খেতে দিবে? ও আমার হাতটি ধরে বলল, চলো চলো মহারাজা আজ তোমার প্রিয় খাবার রান্না করেছি। আমার নিজ হাতে খাইয়ে দিব তোমাকে.. #গল্পঃ- #ছোট_ছোট_মান_অভিমান