আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকে। আমার ছাত্রীর বড় বোনের বন্ধু ছিল সে। ছাত্রীর বোনের সাথে ফেসবুকে এড ছিলাম, সে সুবাদে আমার আইডি পায় সে, আর আমার সম্পর্কে সব জেনে নেয় তার বান্ধবীর কাছ থেকে। ফেসবুকে আমি তাকে মিউচুয়াল ফ্রেন্ড দেখে এড করেছিলাম, কিন্তু কথা বলতে আমার মোটেও ভালো লাগত না, তাই তাকে পাত্তা দিতাম না আমি, সে শুধু ম্যাসেজ দিয়ে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞাসা করত আমি না পারতে জবাব দিতাম। এরপর আমার ছাত্রীর জন্মদিনের দাওয়াত এ আমরা দুইজন ই যাই কিন্তু আমি জানতাম না যে সেও আসছে, সে লুকিয়ে লুকিয়ে তার বন্ধুকে দিয়ে আমার ছবি তুলে। তার তখন অনেক ঠান্ডা লেগেছিল বিধায় গলা ভাঙা ছিল বলে কোন কথা হয় নি। বাসায় ফেরার পর সে আমাকে অনবরত ম্যাসেজ দিয়ে যায়, ফোন নম্বর দেয়, আমি কিছুই নেই না, এদিকে ম্যাসেজ এর উত্তর না দিলে একটু বেয়াদবি হয় তাই উত্তর দিতাম, পরে আমার কলেজের টেস্ট পরীক্ষা আসায় আমি আইডি বন্ধ করে দেই, তাতে সে অনেক মন খারাপ করে। এরপর আবার আইডি খুললে সে ম্যাসেজ দেয়, আমি বুঝতে পারি উনি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে গেছেন, কিন্তু আমি সম্পর্কে রাজি ছিলাম না, সাহস করে উনি আমাকে মনের কথা জানালেও আমি ছয় মাস সময় নেই, ভেবেছিলাম এর মধ্যে উনি আমাকে ভুলে যাবেন, কিন্তু না যোগাযোগ না হলেও উনি আমাকে ঠিকই ভালোবাসতেন। আমার পরীক্ষা শেষে উনি আবার জানান আমার উত্তর কি। এবার আমি আর না করতে পারি না। তাই জড়িয়ে পড়ি তার সাথে। এবার তার সাথে সম্পর্কের পর দেখা করতে যাই। কলেজে যাওয়ার নাম করে কলেজ ড্রেস পরে বের হই আর ইচ্ছা করে একটু অগোছালো এলোমেলো হয়ে আসি উনার ভাবভঙ্গি বোঝার জন্য। উনি কখনো আশাই করেন নি একটি মেয়ে হয়ে আমি এমন অপরিপাটি হয়ে প্রথম ডেটে আসব। আমি আসলে দেখতে চেয়েছিলাম তার কাছে বাহ্যিক রূপ আসল নাকি মনের ভালোবাসা। তাই তার সাথে একটি রেস্টুরেন্টে বসি, তিনি খাবার অর্ডার দিলে আমি সময় স্বল্পতার অজুহাতে না খেয়ে দ্রুত চলে আসি। বাসায় এসে ভাবি উনি আমাকে আর নক দিবে না। কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণিত করে উনি আমাকে আগের মতোই ভালোবাসতে থাকেন। তিনি আমাকে পড়াশোনায় উৎসাহ দিতে থাকেন, আমাদের দেখা হত খুব কম, ফোনে তো একদম ই কথা বলতে পারতাম না, শুধু ম্যাসেজ দিতাম। এভাবেই তার উৎসাহে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয়ে যায়। এখন আমি একটু স্বাধীনতা পাই আর তার সাথে দেখা করি। বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রথম দুইটি বছর তিনি আমাকে ক্যাম্পাসে নিয়ে যেতেন, নিয়ে আসতেন, আমার ক্লাস এর বাইরে বসে থাকতেন, কোন দিন ক্লাস বাদ দিতে দেয় নি। তার অনেক কষ্ট হত, তবুও তিনি যেতেন। আমি ক্লাস এর জন্য বেশী সময় দিতে পারতাম না, তবুও অভিভাবক এর মত পাশে থাকতেন। কখন কি খাব, কোথায় ঘুরব ক্যাম্পাসে নিয়ে যেতেন কারণ আমি তখন কিছু চিনতাম না। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি বলে আমাকে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এ ট্রিট দেয়। এরপর এভাবেই আমাদের পথ চলা চলতে থাকে দীর্ঘ ৩ টি বছর।