"আমার ভ্যালেন্টাইন" ১৪ ই ফেব্রুয়ারী "ভ্যালেন্টাইন ডে"। ভ্যালেন্টাইন তার নিজের জীবনের বিনিময়ে এই দিনটিকে প্রতিষ্ঠা করলেও দিনটি সমাদর পেতে শুরু করেছে এই ২০ এর দশকে এসে। এখন দিনটিকে নতুন যুব সমাজ উৎযাপন করে নিজেদের মত করে।এই দিনে তাদের প্রমোদ যেন ঈদকেও ছাঁপিয়ে যায়।বাস্তবতার যাতাকলের মধ্যে তারা বছর ভরে নিষ্পেষিত হলেও, এই দিনটিতে নিজেদের মত করে চলে। ফাঁকিবাজি-ভেলকিবাজি আর সব শেষে পার্কে, বেঞ্চে, লেকে যে দিকেই তাকানো যায় সেদিকেই শুধু দুই এক-কে দুই। আমাদের সময় অর্থাৎ আজ থেকে দুই থেকে তিন যুগ আগে এসব সুযোগ ছিলনা। তখনকার রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া তো দূরের কথা, তাদের বাড়ির পর্দা ভেদ করে ভেতরে সুরক্ষিত কন্যাদের চাঁদ বদন খানি দেখার আকাঙ্খায় বছরের পর বছর সাধনা করতে করতে কেটে যেত। তবে এ অপেক্ষার মাঝেও যে কতটা আনন্দ ও উত্তেজনা তা শুধু তারাই বুঝবে, যারা সেই সময় আমাদের মত যুবক শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। কোন পরিচিত আত্মীয়ের বাড়িতে নানান অযুহাতে উপস্থিত হতাম, কি জন্য তাতো আপনারা বুঝতেই পারছেন। কিন্তু শত অপেক্ষার পর তনয়াদ্বিগের মুখোমুখি যদিও হতাম তবুও মনের ভেতরের লজ্জা নামক একটা চরম নির্মম বস্তু তাদের দিকে মাথা তুলে তাঁকাতে দিতনা কোন মতেই, শত চেষ্টার গুড়ে বালি, বন্ধু মহলে গোপাল ভাঁড় সাজতে হত। আর শুধু আমার ক্ষেত্রেই যে এমনটা হত তা নয়। প্রতিটি যুবকেরই জীবনে ফর্দ ছিল একই আর এটাই ছিল তখনকার আবহমান গ্রাম বাংলার এক অতি সাধারণ চিত্র এবং ঘটমান দৃশ্য। অবশেষে ছাত্র জীবনের ভণ্ডামির পালা চুকলো কারণ হাতে আসলো একটা চাকরি, আর নিজেকে পর্বতসম কিছু মনে হতে শুরু করলাম। নানা জায়গা থেকে নানা মেয়ের খবর আসছে,তাতেই বুঝলাম যে বিয়ের বয়স হয়ত হয়েছে আমার। অতএব খঁজতে হবে মনের মত বউ।যে যার মত করে শুরু করলাম "মিশন সার্সিং ওয়াইফ"। বাবা-মা তাদের মত করে, আর আমি আমার মহাবিচক্ষণ বন্ধু মহলের সাথে মিলে নেমে পড়ি যুদ্ধ ময়দানে। এই মেয়ের চুল খাটো, ও মেয়ে হ্যাংলা,এর নাক থ্যাবড়ানো,এটা বেশি কালো,ওটার গালে বড় তিল যেন ঘটকের মত।এর দাঁত বাঁকা,ওটা বেশি সাদা যেন ধবল রুগী।এই মেয়ে কথা বলেনা, এই মেয়ে বেশি বকে,এরকম নানান খঁত, খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে বের করতে করতে আমার আর বন্ধু মহলের হাঁড় জির- জিরে অবস্থা কিন্তু সময় তো বয়ে যাচ্ছে। কোন রাজার ঘরেই মনের মত রাজকন্যা নেই। খবর ছড়িয়ে পড়ল পুরো রাজ্য জুড়ে যে, অমুক রাজ্যের রাজ পুত্রের জন্য আদর্শ রাজকন্যা মিলছে না, আশে পাশের সকল রাজার রাজ্য ঘুরে ঘুরে না পেয়ে উজির নাজির পাঠানো হল দূরবর্তী রাজ্যে। অবশেষে আমার এক খালাতো বোনাই এর একটি ফুপাতো বোনের সন্ধান মিললো।শত বাড়িতে মেয়ে দেখার নামে অন্ন ধ্বংস করে এবার উপস্থিত হলাম সেই বাড়িতে। আত্মীয়তার খাতিরে মেয়েটাকে আগেও দেখেছি ছোট বেলায়, আবার দেখলাম তখন।বিয়ের আগে মনের মধ্যে এক হাজার তারাবাজির সারি ফুটে উঠল,আর তার ফুলকি বেরিয়ে আসতে চাইছিল চোখের মনি ভেদ করে,ভেতরের সমস্ত ইন্দিয় সক্রিয় হয়ে বলে উঠল "হ্যাঁ.. একেই তো খুঁজছিলে এতদিন থেকে তুমি। আজ সে বেরিয়ে এসেছে পর্দার আঁড়াল থেকে"।অতএব আর মুহুর্তও দেরি না, আজ রাতেই সম্পন্ন করতে হবে এই যুদ্ধের শেষ ধাপ "শুভ বিবাহ"। রাত ১ টায় শীতের রাতে ঘুমন্ত কন্যাকে টেনে তুলে এনে গোসল করানো হল, আর ১ টা ৩০ মিনিটে যুদ্ধ জয় করলাম কোন অস্ত্র ছাড়াই,কেবল তিনটি কবুল বলে। এই স্মরণীয় দিনটি কোন দিন ও মুছবে না আমার হৃদয় থেকে ; আর পরে খেয়াল করলাম পুরো বিশ্ববাসীই সেলিব্রেট করে আমাদের বিবাহ বার্ষিকী কারণ আমাদের সবার অজান্তেই দিনটি ছিল ১৯৯৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী "ভ্যালেন্টাইন ডে"।।❤️❤️