By - johur khatun

প্রসাদ এর সাথে আমার পরিচয়টা হয়েছিল নেভী হেড কোয়াটার এ । আমার বড় ভাইজান নেভীর অফিসার। ওদের একটা প্রোগ্রামে আমার সাথে ওর দেখা। প্রসাদ শ্রীলংকান নাগরিক । প্রথম দেখাতেই ওর আমাকে ভালো লাগে। আমি তখন মাত্র ক্লাস নাইনে পড়ি।আমার ও ভালো লেগে যায় প্রসাদকে। বড় ভাইজান এর সাথে বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই আমাদের বাসায় ওর যাতায়াত শুরু হলো। আস্তে আস্তে আমাদের প্রেম জমে গেলো। প্রসাদ হিন্দু ধর্মালম্বী। আর আমি মুসলিম। কিন্ত আমাদের প্রেম এসব কেয়ার করলোনা।একদিন আমরা দরা খেয়ে গেলাম, আর সবকিছু জানাজানি হয়ে গেলো। আমার আব্বা যথেষ্ট ধর্মপ্রাণ মানুষ । তিনি সহ বাসার সবাই কিছুতেই এই সম্পর্ক মেনে নিলেন না। আমি খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিলাম। পড়ালেখাও ছেড়ে দিলাম। দিনরাত কান্নাকাটি করতাম।শুধু ওর কাছে যেতে চাইতাম। এর মাঝে বড় ভাইজান একদিন জানালো প্রসাদ এর বাংলাদেশে থাকার মেয়াদ শেষ। ও চলে গেছে নিজের দেশে। বেশ ক'বছর আমি খুব কস্ট পেলাম।ভাইয়া তার এক বন্ধুর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলেন। ছেলের গাড়ীর ব্যবসা আছে পল্টনে।ছেলে দেখতেও ভাল। আমি সজাগ(হবু বর এর নাম)কে আমার ব্যাপারে সব খুলে বললাম। সে সব শুনেও রাজি হলো বিয়েতে। একদিন আমাদের বিয়েও হয়ে গেলো বেশ ধুমধাম করে।যখনকার ঘটনা লিখছি তখন মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট ছিলোনা দেশে। আমি কোনোভাবেই আমার বর এর সাথে সুখী হতে পারলাম না।আমাকে আবার স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হলো। আমি স্কুল শেষ করে কলেজে জয়েন করলাম।সাংসারিক ঝামেলা আমাকে তেমন নিতে হয়নি। এদিকে বিয়ের ছয় বছর পরেও আমাদের কোনো সন্তান হলোনা।এ নিয়ে অবশ্য আমার কোনো মাথাব্যথা ও নেই। সজাগ খুব চেস্টা করে আমাকে সুখী করতে। আমাদের ২ টি সন্তান হয়। এতোকিছুর মাঝেও আমি প্রসাদকে ভুলতে পারিনি। কান্না ,মন খারাপ অভ্যাহত থাকলো। আমার বর হাল ছেড়ে দিলো।বরং আমাকে সে সব সময় সান্তনা দিতো।এরমাঝে পৃথিবীতে কতো পরিবর্তন আসলো। মোবাইল ফোন,ইন্টারনেট সহজতর হলো। এবং আকস্মিকভাবে প্রসাদকে খুঁজে পেলাম ফেবুতে।আমাদের আবার যোগাযোগ হলো। প্রসাদ বিয়ে করেছে। ওর ও দুই মেয়ে। আমি আমার বরকে লুকিয়ে ওর সাথে আবার মেতে উঠলাম। বর একদিন সব জেনে গেলো । ওকে কথা দিলাম শুধু বন্ধুত্ব রাখবো আর কিছু নয়। প্রসাদকে অনুরোধ করলাম বাংলাদেশ এ আসতে।আসার পরপর তিনদিন আমরা দেখা করলাম। ও ফিরে গেলো। আমাদের কথা চলমান থাকলো। আমার বর জানতো ওর সাথে আমার ম্যাসেজিং হয়। কিন্ত বাকি আর কিছু জানাইনি। এভাবে প্রায় দুবছর চললো। হঠ্যাৎ একদিন ওর সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে গিয়ে ওর বউকে দেখে ফেললাম। এতোদিন ও বলেছিল ওরা আলাদা থাকে।এবং ওদের সম্পর্ক খারাপ।বউকে দেখা মাত্রই প্রসাদ লাইন কেটে দিলো। পরেরদিন এই ব্যাপারে জানতে চাইলেই এড়িয়ে গেলো। এরপর শুরু হলো ওর খেলা। ওর যখন ইচ্ছে হয় হ্যালো করে,আদরমাখা কথা বলে,বাকি সময় আমাকে ব্লক করে রাখে। আমি সন্তান,সংসার,স্বামী সব ভুলে শুধু ফোন নিয়ে বসে থাকি কখন প্রসাদ হ্যালো করবে। কিন্ত না পরিস্থিতির উন্নতি হয়না। আমি আবার পাগলপ্রায় হয়ে গেলাম।তারপর যখন আমার হুশ ফিরলো। আমি তাকিয়ে দেখি আমার সামনে আমার দুই মেয়ে আর ভলোবাসার স্বামী।যারা এতোকিছুর পর ও আমার মতো অকৃতজ্ঞকে ভালোবাসায় আকড়ে ধরে আছ।