নতুন হোম টিউটর'কে রিশার ঠিক পছন্দ হয় নি। এত গম্ভীর মানুষ হয়? রিশা মনে মনে এমন একজন টিচার চেয়েছিলো যে একটু প্রাণবন্ত হবে,তার সাথে পড়ানোর ফাঁকে আড্ডা দিবে। বিধি বাম! গম্ভীর হলে কি হবে,নিশাদ ভাইয়াকে তার ভীষণ পছন্দ। যেমন ট্যালেন্ট তেমনি সুন্দর। রিশার পাশের বাসাতেই থাকে৷ ওকে পড়ানোর জন্য ওর বাবা ঠিক করেছে। প্রতিদিন ঠিক ৫ টায় নিশাদ পড়াতে আসে। চুপচাপ চা খায়,পড়ায় আর চলে যায়। রিশার যেদিন বার্থডে,সেদিন রিশা বললো- মা,আজ আমি নিশাদ ভাইয়ার জন্য নাস্তা বানাই? আর কেক কেটে রেখেছো না ওনার জন্য? রিশার মা মুচকি হাসে! রিশা নাস্তার ট্রে টা যখন এনে সামনে রাখলো,নিশাদ চুপচাপ নাস্তা খেলো। কিন্তু,জিজ্ঞেস ও করলো না কেক কিজন্য বা স্পেশাল কিছু কিনা! রিশার খুব মন খারাপ হলো৷ একটু রেগে বললো- স্যার আজ আমার জন্মদিন। নিশাদ নিচের দিকে তাকিয়েই বললো- হ্যাপি বার্থডে রিশা! রিশা এবার একটু খুশি হলো। বললো- আম্মু বলেছে খেয়ে যেতে,সন্ধ্যায় আমার বন্ধুরা আসবে, কেক কাটবো। নিশাদ চোখ নামিয়েই বললো- সরি রিশা,আমার কাজ আছে।থাকতে পারবো না। রিশার খুব মন খারাপ হলো। একটুক্ষণ থাকলে কি হতো! পরদিন নিশাদ আসার সময় একটা গিফট বক্স নিয়ে আসলো। রিশার গিফট। একটা ড্রেস,কলম আর চকলেট বক্স ছিলো। রিশা কি যে খুশী হলো৷ - ধন্যবাদ স্যার! - ওকে,পড়তে বসো এখন।জীববিজ্ঞান এর হোমওয়ার্কটা করো নি কেনো? মাইর খাবা? রিশা মুচকি হাসে। নিশাদ বেশি দূরের জিনিস দেখার জন্য চশমা ইউজ করে। রিশার মনে হয়, নিশাদের চোখ দুটি ভীষণ সুন্দর আর মায়াবি। কেনো যে চশমা দিয়ে ঢেকে রাখে! কিছুদিন পর,রিশার জন্য একটা সম্বন্ধ আসে৷ ছেলে দেশের বাইরে থাকে৷ মা বাবা সবাই রাজি। রিশা শুনে কেঁদে ফেললো। নিশাদ ভাইয়া ছাড়া সে কল্পনাও করতে পারছে না। এ ক'মাসে তাকে যে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে সে! মা বাবাকে বলবে কি করে,এখনো নিশাদের মনের কথা তো জানাই হয় নি৷ ঠিক করেছে আজ জিজ্ঞেস করবে! বিকেলে যখন নিশাদ পড়াতে আসলো, রিশা বললো- - স্যার,বাবা না আমার জন্য ছেলে দেখছে? নিশাদ চোখ না উঠিয়ে বললো- বাহ্ বেশ ভালো খবর। রিশার একটু রাগ হলো। - কিন্তু আমি অন্য একজনকে পছন্দ করি। নিশাদ শান্ত কণ্ঠে বললো- হু,তো বলো সেটা তোমার আম্মুকে৷ - কিন্তু সে আমাকে পছন্দ করে কিনা জানি না। - এসব আমাকে বলছো যে? - কারণ, পছন্দের মানুষ টা আপনি! নিশাদ রেগে গিয়ে বললো- পড়াতে এসেছি তোমাকে,প্রেম করতে নয়। এক থাপ্পড় দিবো।পড়তে বসো।আর কাল থেকে পড়াতে আসবো না। রিশা সে রাতে ভীষণ কাঁদলো৷ নিশাদ তাকে পছন্দ করে না। পরদিন নিশাদ পড়াতে আসলো না৷ রিশাও জেদ ধরেছে,ঠিকাছে আমিও বিয়ে করে নিবো,থাকুক সে! পরদিন, বিকেলে রিশার মা বললো- এই উঠ,নিশাদ এসেছে,সাথে তার মা বাবা! রিশা ভয়ে আতঙ্কে জমে গেলো। নিশ্চয়ই তার নামে নালিশ করতে এসেছে৷ ভয়ে ভয়ে গেলো সবার সামনে৷ রিশার বাবা বললো- আমাদের আপত্তি নেই,নিশাদ ভালো ছেলে,চিনি ওকে। আমাদের রিশাকে ও ভালোই রাখবে৷ দু'জন দু'জনকে পছন্দ করে জানলে তো ওর জন্য ছেলেও দেখতাম না! রিশা ভ্রুঁ কুঁচকে নিশাদের দিকে তাকালো৷ এই ছেলে ও যে তাকে পছন্দ করে সেটা কি যত্ন করেই না গোপন রেখেছে! ১ বছর পর- একটা রিসোর্টে গেলো নিশাদ আর রিশা। রিসোর্ট টা ভীষণ সুন্দর। পাহাড়,সমুদ্র একসাথে দেখা যায়। রিশা বেঞ্চে বসে ছিলো।লাল শাড়ি পড়া।নিশাদ সাদা শার্ট পড়া। রিশার পছন্দের কালার সাদা। রিশা ধোঁয়া উঠা চা হাতে বললো- এই যে সাহেব,ঠিক এরকম বিকেলেই আপনি পড়াতে আসতেন আমাকে মনে আছে? নিশাদ একটু দূরত্বে দাড়িয়ে আকাশ,পাহাড়, সমুদ্রের মিলন মেলা দেখছিলো৷ রিশার দিকে না তাকিয়েই, চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললো- হ্যাঁ,আমার শ্বাশুড়ির চা'য়ের লোভেই তোমাকে পড়াতে যেতাম।নয় তুমি তো এত বোকা স্টুডেন্ট ছিলা।মন চাচ্ছিলো দু'দিন পড়িয়েই বিদেয় হই! রিশা চা'এর কাপটা নামিয়ে রেখে ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো৷ এই ছেলেটার মজা সে নিতে পারে না। ভালোবাসার ভিশন ছিলো- ভালোবাসা পাওয়া,আমরা তা পেয়ে গেছি। একটু টক ঝাল মিষ্টি করে নিয়েই পেয়েছি৷