রাগ কি একা তাঁরই আছে। আমার নেই? আমি কি কিছুই না নাকি! কিসের এত অহংকার তাঁর? ভালোবেসে সময় দিই বলে তাঁর এত ভাব। আমার কোনও কথা কানে তুলবে না, নিজের ইচ্ছেমতো চলবে! তাহলে আমার অবস্থান কোথায়? আর কেনই বা এর মাঝে রিলেশন নামক শব্দটাকে বাধ্য করে নিজেদের মাঝে লালন করা? তবে যাক এবার উচ্ছন্নে। তাতে আমার কি? খুশবু’র সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে একটু আগে। রাগে গর গর করতে করতে অজানার উদ্দেশে কথার এই বুলেট ছুঁড়ছিলাম আমি। রিলেশন শুরু হবার পর থেকে এমন কোনদিন নেই যে ঝগড়া হয়নি। ছোট ঝগড়া, মাঝারি ঝগড়া, চিল্লাচিল্লি, মুখ ভেংচা-ভেংচি আরও কত কি! সেই তিন বছর আগে ছোট্ট দুটি মন আবেগের বশে কখন যে বলে ফেলেছিল “আই লাভ ইউ”। ঝগড়া করে কথা বন্ধ থাকলেও যোগাযোগ বন্ধ হয়নি আমাদের কখনো। মজার ব্যাপার হলো যতবারই আমাদের কথা বন্ধ হয়েছে ততবারই রিলেশনশিপটা আরও শক্ত হয়েছে বহুগুণে। সেদিন বিছানায় আধশোয়া আমি। রাত একটা। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। খুশবুর ফোন। রিসিভ করবো না করবো না করেও ফোন রিসিভ করে ফেললাম আমি। প্রথমে দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার কথা হলেও ধীরেধীরে কথায় কথায় কথা কাটাকাটির মধ্যে দিয়ে আমাদের কথা শেষ হয়। আজ প্রায় একসপ্তাহ হয়ে গেল খুশবু আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে না। মনটা ভীষণ খারাপ আমার। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। হুট করে আমি মনস্থির করলাম খুশবু’র গ্রামের বাড়ি যাবো। ঠিকানা আগেই সেভ করা ছিল আমার মোবাইলে। খুশবু’র দাদুর বাড়িটা ঘোর গ্রামে। গ্রামে গিয়ে আমি ওদের বাসার গেটে খুশবু’র আম্মুকে দেখে নিশ্চিত হলাম খুশবু এখানেই আছে। আমি খুশবু’র দাদু বাড়ীর থেকে একটু দূরে মূল রাস্তায় একটা কালভার্ট আছে ওখানে গিয়ে বসে পড়লাম। কালভার্ট এর ওপর দুহাত রেখে সামনের পানে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমি। “অত কি ভাবছো” কান্না জড়ানো কণ্ঠস্বরে আমাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো খুশবু। তাকিয়ে দেখি খুশবু আমার দেয়া নীল শাড়িটি পড়েছে আর দেখতে একদম স্বর্গের ইন্দ্রিয় অপ্সরী লাগছে। আমি কিছুই বললাম না। খুশবু বলল—তুমি যখন এসেছ আমি দেখেছি। তারপরই শাড়িটা পড়েছি। না এলে পড়তাম না। মাস খানেক আগে আমিই নিউমার্কেট থেকে শাড়ীটা কিনে দিয়েছিলাম ওকে। বলতে বলতে খুশবু আমার বুকে মাথা রেখে কান্নাজড়িত অভিমানি কণ্ঠে বলতে লাগল, এতদিনে একবারও আমাকে মনে হলো না তোমার! না হয় আমি ভুল করেছিলাম। আমাকে তুমি শাসন করলে না কেন? কেন আমাকে তুমি ফেরালে না? তুমি কি ভেবেছ খুব সুখে আছি তোমাকে ছাড়া! একটানা কথার বুলেট বলেই চলেছে খুশবু। অঝর ধারায় কান্না ওর চোখে। আমি দুহাত দিয়ে খুশবুকে জড়িয়ে ধরে আছি। আমার চোখ বেয়ে অশ্রু কখন জিহ্বা ছুয়েছে তা আমি জানি না। অনেকদিন পর আমি আবারও আমি আবিষ্কার করলাম চোখের জলের স্বাদ নোনতা। আর ঐ দিন খুশবু আমাকে উপলব্ধি করিয়েছে যে, ভালোবাসায় দুষ্টু-মিষ্টি ঝগড়া ‘ভালোবাসার ভিশন’-কে করে তোলে আরও সুদৃঢ়।