By - Farhad Reza

“রাখী আর রেজা সহপাঠী, সহপাঠীতা ছাপিয়ে রেজা রাখী কে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে চাইলেও রাখি রেজা কে স্রেফ সহপাঠী হিসাবেই দেখে,সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রাখী আর রেজা বসে আছে, রেজার হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ দেখে রাখী জানতে চাইলো‘গোলাপ কার জন্যে?’ রেজা বলল,এটা আমার ‘রাজকুমারী’র জন্য কিন্তু,আমি তাকে এটা দিতে পারছিনা! রাখী বলল,‘চেষ্টা কর,অন্তত সেতো খুশী হবে!’এ কথা শোনার পর রেজা উঠে হাঁটতে লাগলো!রাখী রেজা কে ডেকে বলল,‘তোমার গোলাপ রেখে গেলে তো!’ রেজা বলল,‘আমি তোমাকে(রাখী কে) বলেছিলাম না এটা আমার ‘রাজকুমারী’র জন্য!.........রাত ১ টা,রাখী আর রেজা ছাদে হাঁটছে,হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল! রেজা অপ্রস্তুত, কি করবে ভেবে না পেয়ে আচমকা নিজের শার্ট খুলে রাখীর মাথায় ছাতার মত মেলে ধরল!রাখী বলল,‘তুমি পারো আর আমি পারিনা?’এরপর নিজের শরীর এর ওড়না টা খুলে জড়িয়ে দিল রেজার গায়ে,বিনিময় হল দু জোড়া চোখের চাহনি,সূত্রপাত হল পরস্পরের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ!ঠিক তখন-ই হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল রেজার,রেজার বুঝতে বাকি রইলনা...না,এটা বাস্তব নয় নিছক-ই স্বপ্ন!.........তীব্র শীত আর হাড় কাঁপানো হিমেল হাওয়া,রাখী আর রেজা হাঁটছে চাঁদনী রাতে খোলা প্রান্তরে,মাঝেমাঝে খুনসুটি আর নিরব পথচলা,হঠাৎ রাখী প্রচণ্ড শীতে কাঁপছে রেজা তা টের পেয়ে নিজের জ্যাকেট খুলে পড়িয়ে দিল রাখীর কার্ডইগানের উপর,তারপর নিজের শার্ট খুলে,টি-শার্ট খুলতে যাবে এমন সময় রাখী বলল,‘থাক থাক অনেক হয়েছে,এটাও খুললে খালি গায়ে দেখতে লজ্জা লাগবে!’ ঠিক ঠিক তখন-ই হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল রেজার,রেজার এবারও বুঝতে বাকি রইলনা...না,এবারও এটা বাস্তব নয় নিছক-ই স্বপ্ন!.........রাখী আর রেজা পাশাপাশি শুয়ে আছে, ঘুম আসছেনা রেজার! রাখীর কানের কাছে নিজের মুখ টা নিয়ে যেয়ে ফিস্ফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করল,‘কি ঘুমিয়ে পড়লে?’রাখী বলল ‘না,ঘুম আসছেনা!’তখন আবদারের সুরে রেজা বলল,‘চলনা, না ঘুমিয়ে ধূমায়িত দু মগ কফি হাতে বারান্দায় যেয়ে দাড়াই,তীব্র শীতে জমে যাওয়া দুটো শরীর গরম কফির উষ্ণতায় উস্নশিত হবে ভাল’,অতঃপর দুজন কফি হাতে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়, হঠাৎ দমকা হাওয়ায় রাখীর এলোমেলো চুল এসে লাগলো রেজার দু চোখে,যুগপৎ চুল সরাতে চোখে হাত দিতে যেয়ে রাখীর এক হাতের ধাক্কায় রেজার হাত থেকে কাঁচের মগ মাটিতে পড়ে ভেঙ্গে গেল,ভাঙ্গার ঝনঝন আওয়াজে সম্ভিত ফিরে পেয়ে রেজা বুঝল,না,পুরো কাহিনী টা বাস্তব নয় নেহায়েৎ-ই স্বপ্ন!এবার আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব,(যুগপৎ রেজা ও রাখী দুজন-ই বুঝতে পারে তাদের পরস্পরের ভালবাসার ভিসন)যেটা হওয়া উচিত ছিল রেজার তরফ থেকে সেটা হয়ে গেল রাখীর তরফ থেকে!খুব ভোরে রাখী ফোন করে রেজা কে...রেজা তন্দ্রাছন্ন হাতে ফোন ধরে কার ফোন না দেখেই বলে ‘হ্যালো’,ওপাশ থেকে রাখীর আবেগ মিশ্রিত কণ্ঠ...... ‘রেজা’... ‘রেজা’... ‘রেজা’...শুনতে পাচ্ছ আমাই?এত করে ডাকছি তবুও শুনতে পাচ্ছনা?কি,এত করে ডাকছি বললাম তা বিশ্বাস হচ্ছেনা?কান পেতে শুনো, কি শুনতে পাচ্ছ?আসলে শুনতে চাইছনা বলেই শুনতে পাচ্ছনা,আমি কিন্তু তোমাই ঠিক-ই ডাকছি,আচ্ছা,আমার ডাক শুনতে চাওনা কেন?কারো না কারো ডাক তো শুনতে চাও সেটা আমার হলে ক্ষতি কোথায়?......!ভোজভাজির মত ঠেকছে রেজার কানে রাখীর কথাগুলো!কিন্তু,যেহেতু এটা স্বপ্ন নয় বাস্তব তাই রেজা শুধু কম্পিত কণ্ঠে রাখী কে বলল আজ বিকাল ৪টায়(২০০৮ সালের ভালবাসা দিবসের দিন) টি,এস,সি প্রাঙ্গনে থেকো বলেই ফোন রেখে দিল!বিকাল ৪টা,রেজার মুখোমুখি রাখী দাঁড়িয়ে,রেজার উদ্দেশ্যে রাখী গড়গড় করে একনাগাড়ে বলে গেল,‘প্রতারণা করে জিতার চেয়ে ভালবেসে হেরে যাওয়াটাই শ্রেয়...আমি নাহয় ভালবেসেই হারব!’......আর রেজা?রেজার কি প্রতিক্রিয়া?হ্যাঁ, রেজা সাথে করে নিয়ে আসা গোলাপের পাপড়ি রাখীর হাতের তালু তে রেখে আঙ্গুল গুলো দিয়ে মুঠোবন্দী করে হাতের তালুর উল্টো পাশে আলতো করে ঠোঁট এর স্পর্শ দিয়ে বলল,‘ঠোঁট এর ছোঁওয়া হাতে আর পাপড়ির ছোঁওয়া হৃদয়ের চিলেকোঠায়......!”