২০১৪ সালে বিবিএ শেষ করে যখন ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবার কথা ঠিক তখনই পরিবারের অসম্মতি থাকা সত্বেও ভালোবাসার মানুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। আর তখন থেকেই নিজের উপর পরিবারের সাপোর্ট সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলি। যেহেতু বিয়ে করে ফেলেছি তাই তখন আমার ভিশন হয়ে দাঁড়ায় ভালো একটি চাকরির ব্যবস্থা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা ও পরিবারের সবার মন জয় করা। আর সেই ভিশনকে বাস্তবে রুপ দিতে আমি তখন নেমে পড়ি চাকরি খোজার মিশনে। আত্মীয় স্বজন অনেকের কাছেই চাকরি চেয়েছি। কিন্তু কেও সেরকম ভাবে এগিয়ে আসেনি। বরং আরোও দু-চারটা কথা শুনিয়ে দিতো যে, ''রোজগার না শিখতেই বিয়ে করেছো এখন বুঝো কেমন লাগে।" এসব কথা শুনে আমি যখন হতাশ হয়ে পড়তাম, তখন আমার স্ত্রী আমাকে সাহস দিয়ে বলতো, "এসব কথায় তুমি মন খারাপ করো না। যেহেতু আমরা পরিবারের অসম্মতিতে বিয়ে করেছি, মানুষের দু চারটা কথা শুনতে হবেই। তুমি হাল ছেড়ে দিও না। আল্লাহ তোমার অবশ্যই একটা ব্যবস্থা করে দিবেই।" যাইহোক, আমি তার কথা মতো হাল ছেড়ে না দিয়ে বিডি জবস ডট কমে চাকরি খুজতে থাকি। অবশেষে ই-কুরিয়ার নামক একটি কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারি রাইডার হিসাবে হয়। মনে মনে ভাবলাম লেখাপড়া করে ডেলিভারি রাইডারের চাকরি করবো? কিন্ত কি আর করার, সেই মুহূর্তে আর কিছু করার ছিলো না। যাইহোক, সংসার চালানোর তাগিদে সেই চাকরিতেই জয়েন করলাম। কিন্ত ডেলিভারি দিতে গিয়ে অনেক সময় পরিচিত লোকের সাথে দেখা হয়ে যেতো। তখন খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তাম। আর সেই জন্য ৫/৬ মাস করার চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। এরপর কিছুদিন চাকরি করলাম সেলস সহকারী হিসেবে যমুনা ফিউচার পার্ক শপিংমলে প্রাইড শাড়ির আউটলে। কিন্তু সেখানেও নিজেকে মানাতে পারলাম না বলে সেই চাকরিও ছেড়ে দিলাম। এখন বর্তমানে আল্লাহর রহমতে ফকির গ্রুপে ইনভেন্টরি বিভাগে একজন সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছি। পিছুটান থাকার করণে চাকরি জীবনে খুব একটা আগাতে না পারলেও ভালোবাসার ছোট্ট ঘরটিকে মোটামুটি ভাবে সাজিয়েছি টুকটাক আসবাবপত্র ও সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে। যার মধ্যে ভিশন ব্র্যান্ডের একটি সিলিং ফ্যান, একটি বেলেন্ডার ও একটি স্ট্রিম আয়রনও রয়েছে। এই পর্যন্ত আসার পিছনে ভালবাসার মানুষ আমার স্ত্রীর অনেক সাপোর্ট রয়েছে। দেখতে দেখতে ভালোবাসার ৭ টি বছর কেটে গেল। বিয়ের প্রায় ৫ বছর পর আল্লাহ আমাদের এই ভালোবাসার ঘরে একটি পুত্র সন্তান দান করেছেন। সন্তান হওয়ার পর পরিবারের লোকজনও এখন সবকিছু ভূলে আবার আপন করে নিয়েছেন আমাদের। আমার স্ত্রীও তার ভালোবাসা দিয়ে আমার পরিবারের সবার মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। আমি ও আমার স্ত্রী আল্লাহর কাছে শুক্রিয়া অনেক সুখে আছি। তারপরও মাঝে মাঝে আমার স্ত্রী আমাকে বলে, "তুমি যদি ভালোবেসে আমাকে বিয়ে না করতে তাহলে তোমার জীবনে এত পিছুটান থাকতো না। আজ তুমি আরো ভালো অবস্থানে থাকতে।" তখন আমি তাকে বলি, "হয়তো বা আরও ভালো অবস্থানে থাকতাম, কিন্ত আমার ভালোবাসার মানুষকে তো আর পেতাম না। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভূল ও পিছুটানের একমাত্র কারণ যদি হয়ে থাকে তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করা, তবে সেই ভূলের জন্য আজীবন প্রায়শ্চিত্ত করতেও বিন্দু পরিমান আপত্তি নেই।"