প্রথম প্রেম! কথাটা শুনলেই আমার শরীর রাগে জ্বলে উঠে। অবশ্য কারনও আছে। যে এখন আমার সাথে আছে, আমি তার প্রথম প্রেম না; কিন্তু সে আমার প্রথম প্রেম। বুদ্ধি হবার পর থেকেই আমি তাকে চেয়েছি, ভালবেসেছি। যদিও ১৩-১৪ বছর বয়সে এত আবেগ ছিল না, কিন্তু জীবনসাথী হিসেবে তাকেই ভেবে নিতাম। অনেকবার বলতে চেয়েও বলতে পারি নি, পিছিয়ে এসেছি। স্কুল পেরিয়ে কলেজে এসে যখন বলব বলে এগিয়ে গেলাম, তখন দেখি সে অন্য একজনের বাধনে আঁটকে গিয়েছে। রাগে, দুঃখে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিলাম, অনেক দূরে। কোন যোগাযোগ রাখি নি, কখনো খোঁজ নিই নি। কিন্তু পারি নি। ২ বছর পর তাকে এক নজর দেখার জন্যে ছুটে গিয়েছিলাম। এই দুই বছরে অন্য কাউকে তার জায়গায় ভাবতে পারি নি। কিন্তু একি! তাকে দেখেই বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠল। এও কি সম্ভব! মাত্র দুটো বছরে একটা মানুষের এত পরিবর্তন হওয়া সম্ভব? এত সুন্দর চোখের নিচে রাতের পর রাত জাগার প্রমানস্বরূপ কালি লেপ্টে আছে, একসময়ের উজ্জল-মিস্টি মুখটার জায়গা দখল করে আছে ফ্যাকাশে এক মুখ। সেই রাগ-দুঃখ-অভিমান ভুলে মায়া জন্ম নিল। গ্রামের মেয়ে। প্রথম যৌবনে ধরা পরে তার কাজিনের প্রেমে। হৃদয় নিংড়ে সমস্ত ভালবাসা উজার করে দিচ্ছে তার প্রেমিক পুরুষটিকে। কোন আবদারই অপূর্ন রাখে নি। এই তো প্রেম। ধীরে ধীরে একসময় সত্যিটা ধরা পড়তে থাকে তার চোখে। দেখেও না দেখার ভান ধরে থাকে সে। একসময় পরিবারের সবাই সবকিছু জেনে যায়। নিজেকে নির্দোষ প্রমান করে দূরে চলে যায় তার প্রথম প্রেম। সে একা রয়ে যায়। একেকটা নতুন দিন পেরিয়ে রাত নেমে আসে অপমান, গালি শুনতে শুনতে। রাতের পর রাত বালিশ ভিজিয়ে অপেক্ষা করেছে সে এসে তাকে উদ্ধার করবে, অপমান থেকে মুক্তি দিবে। কিন্তু না, সে আসে নি। আমি যখন আসি, তখন সে ছিল উত্তাল সমুদ্রের মাঝে স্রেফ একটা মাঝি ছাড়া বেওয়ারিশ নৌকা। খুব অল্প সময়েই আমি তার মাঝি হয়ে উঠি। আমাকে আঁকড়ে ধরেই সে আবার নতুন করে হাসতে শিখল, জীবনকে গুছিয়ে নিতে শিখল। আর আমি খুশি, কারন আমি আমার প্রথম প্রেমকে কাছে পেয়েছি। শুধু মাঝে মাঝে হিংসে হয়। কারন আমি তার ভালবাসার একমাত্র ভাগীদার না। অবশ্য আমি জানি, এখন তার সমস্ত ভালবাসা শুধু আমার জন্যেই। তবুও হিংসে হয়।