By - Taslima Khan

তার সাথে পরিচয় আমার কলেজ থেকেই।তবে তেমনভাবে কখনো কথা বলা হয়ে উঠেনি।তার কারন তার গ্রুপ আর আমার গ্রুপ ভিন্ন ছিল। কলেজ শেষ হওয়ার দুই বছর পর তার সাথে আমার ফেসবুকে কথা হয়। আস্তে আস্তে তার প্রতি আমার ভালোলাগা কাজ করতে শুরু করে।সে আমাকে প্রথমে প্রপোজ করে। মনে মনে ভাল লাগলেও তার প্রপোজের উত্তর আমি তাকে দেইনি।এরপর হঠাৎ টানা একুশদিন সে ফেসবুকে আসেনি।আমি খুব বিচলিত হয়ে পড়ি তার কিছু হলো কিনা। এদিকে তার মোবাইল নাম্বারটি আমার কাছে থাকলেও আমার নাম্বারটি তার কাছে ছিলনা।আমিই তাকে দেইনি।তার সাথে আমার ফেসবুকেই কথা হত শুধু।আমি তাকে ফোন করি আর চুপ করে থাকি।সে কিছুক্ষণ হ্যালো হ্যালো বলার পর কেটে দেয়।তার সেই কল রেকর্ডটি আজও আমার কাছে আছে। সে একুশ দিন পর ফেসবুকে আসলে তার সাথে কথার খুনশুটি শুরু হয়ে যায়।কেন সে ফেসবুকে আসলো না,কেন সে আমার কোন খোঁজ নিলোনা।সে বলল,আমি ফেসবুকে না আসলে, তোমার কোন খোঁজ না নিলে তোমার কি? তুমিতো আমাকে ভালবাসোনা।আমি বললাম বাসিতো।অনেক বাসি।সে বলল কিসের বাসি? কাঠের বাঁশি নাকি বাশেঁর বাশিঁ? আমি বললাম আরে ঐ বাসিনা; সে বলল কোন বাশিঁ তাহলে? আমি বললাম আরে আমিও তোমাকে ভালবাসি।যাহ বলেই ফেললাম।এভাবেই তার প্রপোজের উত্তর অবশেষে দিয়েই দিলাম।আস্তে আস্তে কথা বলতে বলতে কখন যে ভাললাগা থেকে ভালবাসায় পরিনত হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। প্রথমে সে দুষ্টামি করে প্রপোজ করলেও ধীরে ধীরে সেটা সিরিয়াসে রুপান্তরিত হয়।এরপর একদিন আমরা একসাথে নীলক্ষেতে যাই বই কিনতে। কিন্তু সেদিন ছিল মঙ্গলবার আর সেদিন বইয়ের দোকান ছিল বন্ধ।তাই হাটতে হাটতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাই।হঠাৎ দুষ্টুমি করেই তাকে বলে ফেলি তুমি কিন্তু আমাকে হাটু গেড়ে কখনো প্রপোজ করোনি।এটা বলতে বলতে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসি।হঠাৎ দেখি সে গাছ থেকে একটি ফুল পেড়ে হাটু গেড়ে আমার সামনে বসে আছে।আমিতো খুবই লজ্জা পাচ্ছিলাম।এরপর কোন রকমে ফুলটা নিয়ে হাটা ধরেছিলাম।ফুলটির নাম জানিনা তবে হালকা বেগুনী রংয়ের ছিল।সেই ফুলটি আজও যত্ন করে ডায়েরিতে রেখে দিয়েছি।তার আর আমার ভালবাসার ভিশন ছিল আমাদের সম্পর্কটাকে দীর্ঘস্থায়ী করা।একসাথে পথ চলা।এই পথে বহু বাধা-বিপত্তি এসেছে। সকল বাধা অতিক্রম করে আমরা আমাদের লক্ষ্যে অটুট ছিলাম।হাল ছাড়িনি আর হাত ও ছাড়িনি।একসাথে থাকার পণ নিয়েছিলাম।আমার অনার্সের রেজাল্ট পাওয়ার পর আমার আম্মু আমাকে একটি গোল্ডের চেইন কিনে দিয়েছিল।তখন সে বলেছিল আমিতো তোমাকে কিছু দিতে পারলাম না তবে একদিন দেখো ভাল ইনকাম হলে তোমাকে আমি অনেক কিছু দিব।তার লক্ষ্য ছিল আমাকে ইনকাম করে গোল্ডের কিছু গিফট করবে।সেটা সে পেরেছে।সে আমাকে একটি বাড়ি করে দেওয়ার স্বপ্ন দেখে।হয়তো একদিন সেটিও পূরণ হবে। এরপর একসময় ভাললাগা আর ভালবাসাকে একত্রিত করে দুজন বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হই।ভালবাসার ফলস্বরূপ এখন আমাদের একটি পরীও রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই সে আমার অনেক যত্ন করেছে।আর যখন শুনল আমি মা হতে চলেছি তখনতো যত্নের মাত্রা আরো বেশি বেড়ে গেল।সঠিক সময়ে আমার ওষুধ খাওয়া,নিয়মিত চেকআপে নিয়ে যাওয়া,আমি একটু অসুস্থবোধ করলেই আমার হাত ধরে উঠানো-শোয়ানো সবকিছুই সে করেছে।আমি চিন্তায় বিষন্ন থাকলে আমাকে খুশি করতে গান গেয়ে শোনানো বা মজার মজার জোকস ও সে বলেছে।যেদিন আমি ডেলিভারির জন্য হাসপাতালে ভর্তি হলাম ৩/৪ রাত সে ঘুমায়নি।আমার সাথে হাসপাতালের বারান্দায় রাত অব্দি অবিরত হেটেছে।আমি ব্যাথায় কাতরাতে থাকলে সে আমাকে সাহস জুগিয়েছে।এভাবেই সারাজীবন সে যেন পাশে থাকে। তার জন্য অফুরন্ত ভালবাসা। বিয়ের পর সে আমাকে সমুদ্র দেখাতে পারেনি ঠিকই কিন্তু তার ঐ বিশাল বুকে যখন আমি মাথা রাখি তখন তার বুকের বাম পাশে থাকা হৃদস্পন্দনে আমি সাগরের ঢেউ অনুভব করতে পারি।তার বুকটা হচ্ছে আমার জন্য সমুদ্র আর তার হৃদয়ের ধ্বনিটা হচ্ছে আমার জন্য সেই সমুদ্রের ঢেউ।আমি বার বার সেই সমুদ্রে ডুবে থাকতে চাই,যেখানে শুধু সে আর আমি আর কেহ নাই। ভালবাসি খুব বেশি।আমাদের ভালবাসার ভিশন হচ্ছে একসাথে পথচলা,মৃত্যুর আগ-পর্যন্ত তার সঙ্গী হয়ে থাকা।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা আমাদের এই সম্পর্কটা যেন দীর্ঘস্থায়ী ও অটুট হয়।সারাজীবন হাতে হাত রেখে একসাথে পথ চলতে পারি। ❤