By - Yusuf Jamil Faysal

ভালোবাসা হচ্ছে কোনো বিশেষ মানুষের প্রতি স্নেহ, আবেগ, অনুভূতি ও দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ । ভালোবাসা আছে বলেই মানুষ সামাজিক জীব। ভালোবাসা দেখা যায় না, এটা অনুভব করে নিতে হয়। তাই ভালোবাসা হচ্ছে ব্যক্তিগত অনুভূতি যা একজন অন্যজনের প্রতি অনুভব করে। এ পৃথিবীতে ভালোবাসা আছে বলেই ভালোবাসার গল্প আছে। আমার ভালোবাসার গল্প আজ থেকে ৫ বছর আগে শুরু হয় । আমার ছোট মামার বিয়েতে পরিবারের সবাই যাই । আত্মীয় স্বজনের ভরপুর বিয়ে বাড়ি । আমরা সেখানে যাওয়ার পর ছোট খালা তার পরিবার নিয়ে বাড়িতে আসে । হঠাৎ আমার নজর একটি মেয়ের প্রতি পড়লো । অবাক নয়নে তাকিয়ে আছি তার দিকে । মেয়েটি কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল ফয়সাল ভাইয়া না! কেমন আছেন? ভালো বললাম, ভালো আছি । তুমি কি আমার খালাতো বোন সাবিনা ? মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলতেই, পিছন থেকে একটা ছেলে না দেখে খেলতে খেলতে সাবিনাকে ধাক্কা দিল । সাবিনা আমার বুকে এসে পড়লো । আমি তাকে ধরে ফেলি যেন মাটিতে না পড়ে যায় । সাবিনা লজ্জা পেয়ে চলে গেল । যাওয়ার আগে বলল: Sorry. সাবিনার সাথে আগে আমার মাঝে মাঝে খালার ফোনে কথা হতো । কিন্তু খুব বেশি সময় কথা হতো না । ১ অথবা ২ মিনিটের মধ্যে কথা শেষ হতো । কে কেমন আছি সেটা জানতাম । সাবিনা এইচএসসি ১ম বর্ষতে পড়ে। তাই তাঁর ব্যক্তিগত ফোন ছিল না । প্রায় ৭ বছর পর আবার দেখা হলো । আগের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়েছে । রাতে মামার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো । কিছু হলুদ বাটা হাতে নিয়ে এসে সাবিনা আমাকে মাখিয়ে দিল । আর বলল এই দিনটি তোমারও আসবে খুব তাড়াতাড়ি । এই বলে চলে গেল আর আমি বোকার মত দাঁড়িয়ে ছিলাম । নাচে-গানে মুখরিত বিয়ে বাড়ি । প্রায় ঘন্টা খানেক পর একটা ছোট বাচ্চা এসে আমাকে একটা চিঠি দিল । বলল, সাবিনা আপু দিয়েছে । আমি চিঠি খুলে পড়তে শুরু করলাম । চিঠিতে লেখা ছিল: অনেকদিন পর তোমাকে দেখলাম । তোমাকে দেখে আমার অনেক ভালো লাগছে । গতবছর তোমার মা মানে আমার খালা আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন । তখন খালার ব্যাগ থেকে তোমার একটা ছবি চুরি করে ছিলাম । তাই আজ সহজেই তোমাকে চিনতে পেরেছি । ছবির চেয়ে তুমি আমার কাছে বেশি সুন্দর । তোমার কি মনে আছে, আমরাও একসময় ছোটবেলায় জামাইবউ খেলা খেলতাম । আমি এখনো এই স্মৃতিগুলো আমার মনের গভীরে লুকিয়ে রেখেছি । তোমার সাথে কাটানো প্রত্যেকটি দিন আমার কাছে স্মরণীয় সোনালী দিন হয়ে আছে । চিঠি পড়ে যা বুঝলাম, সাবিনা এখনো আমাকে পছন্দ করে । আমি চিঠির কোন উত্তর দেইনি । চিঠি ছিঁড়ে ফেলেছি । এটা দেখে অভিমান করলো সাবিনা । পরদিন বিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো । সাবিনা শাড়ি পড়ে আমার সামনে আসলো । একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি । পাশ কেটে চলে গেল । আমরা কনের বাড়িতে গিয়ে আনন্দ করে নতুন মামীকে নিয়ে আসলাম । মামার বাসর ঘর সাজানোর সময় একটি চিরকুট আমার কাছে দিল সাবিনা । আমি বাহিরে গিয়ে দেখি চিরকুটে লেখা: বাঁশবাগানে আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো । রাত ১২ টায় । তুমি না আসা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবো । আমি ইচ্ছে করেই ১০ মিনিট আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকি দেখি সে আমার অপেক্ষা করছে । এরপর ১২ টা ১০ মিনিটে তার কাছে যাই। সে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, সে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে । তার ভয় লাগছে । আমি তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, তুমি আমাকে কেন ডেকেছো? আর "চিঠি আর চিরকুট" এগুলোর মানে কি? সাবিনা: আমার ফোন নেই তাই চিঠি আর চিরকুট দিয়েছি । আমি এখনো প্রতি রাতে তোমাকে নিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি । তোমাকে নিয়ে আমার ভালোবাসার স্বপ্নবুনি । আমি তোমাকে আমার আপন করে নিতে চাই । বলো তুমি আমাকে ভালোবাসবে । সারাজীবন একসাথে থাকবে । হাতে হাত রাখবে । আমি : সম্ভব না। সাবিনা : আমাকে কি তুমি পছন্দ করো না? আমি : মনে হয় না! সাবিনা : তুমি কি আমাকে চাও? আমি : না ! সাবিনা : আমি চলে গেলে তুমি কি কাঁদবে? আমি : না। সাবিনা : তুমি কি আমার জন্যে বাঁচবে?? আমি : না। সাবিনা : তুমি কি আমার জন্যে কিছুই করবে না?? আমি : না… সাবিনা : আমি এবং তোমার লাইফ এই ২টার ভিতরে কোনটা কে বেছে নিবে??? আমি : আমার লাইফ… _ সাবিনা খুব কষ্ট পেয়ে কান্না করতে করতে চলে যেতে লাগলো, আমার এই রকম উত্তর পেয়ে। . তখন আমি একটু চিৎকার করে বলতে শুরু করি…… তুমি আমার মনে ডুকতে পারো নি, কারণ, তুমি আমার মনের ভিতরেই আছো। আমি তোমাকে পছন্দ করিনা, কারণ, আমি তোমাকে ভালোবাসি আমি তোমাকে চাইনা, কারণ, আমার তোমাকে প্রয়োজন সবসময়। আমি কাঁদবো না তুমি চলে গেলে, কারণ, তুমি চলে গেলে আমি মরেই যাবো। …আমি তোমার জন্যে বাঁচবো না, কারণ, আমি তোমার জন্যে মরতে পারি। আমি তোমার জন্যে কিছুই করবো না, কারণ, তুমি জানো আমি সব কিছুই করি তোমার জন্যে… …আমি আমার জীবন কে বেছে নিলাম, কারণ, তুমিই যে আমার জীবন। সাবিনা আমার এই কথা শুনে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে, কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো… সাবিনা : কেনো এতো ভালোবাসো আমায়? আমি : জানিনা। তবে ভালোবাসি তাই ভালোবাসি তোমায়……!!! মামার বিয়েতে ৩ দিন থেকে আমরা চলে আসি বাসায় । সাবিনার কলেজের বান্ধবী ছিল সাথী । সে আমাদের গ্রামের মেয়ে । আমরা বিয়ে বাড়ি থেকে আসার ঠিক ১২ দিন পর ১৪ই ফেব্রুয়ারি সাবিনার বান্ধবী সাথী এসে আমাকে একটা চিঠি দিল । বলল সাবিনা দিয়েছে । নীল কাগজে চিঠিতে লেখাছিল: (ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা) প্রিয়, আমাদের ভুবনে থাকবে না কোনো বেদনা, থাকবে না কোনো বিরহ আর দেনা-পাওনা ! তোমাকে ছেড়ে আমি কখনও দূরে যাবো না, তোমার ব্যাপারে আমি পিছপাও হবো না ! ঢেকে রাখবো তোমায় দিয়ে সব ভালোবাসা, প্রমাণ করতে পারি, তুমিই আমার আশা । আমার জীবনে তুমি এনে দিলে পরিবর্তন, তোমার জন্য আমার সব! এটা রেখো স্মরণ ! তোমার হৃদয় মাঝে আমায় দিও আসন, তুমি আমার ভালোবাসা, তুমিই আমার ভূবন । ইতি, সাবিনা ইয়াসমিন এভাবেই আমাদের সম্পর্ক কিছুদিন চলার পর সাবিনার এইচএসসি পরীক্ষা শেষে আমরা দুই পরিবারকে জানাই । সবাই এতে রাজি হয় । করোনা মহামারীর কারণে স্বল্প পরিসরে আমাদের বিয়ের আয়োজন করা হয় । দাম্পত্য জীবনের প্রায় দুই বছর অতিবাহিত হচ্ছে । সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন । ইউসুফ জামিল ফয়সাল