অফিসের কাজে হংকং এসেছি,গ্রাজুয়েশনের পর ই চাকরী টা পেয়ে গেলাম!আমার স্বপ্নের শহর,বাইরে কনকনে ঠান্ডা - তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড.আমি মুল শহর থেকে বেশ দুরের একটা ডরমেটরী তে উঠেছি. এই শহর টাতে ট্রেনিং এ এসেছি. ছোট্ট ছিমছাম নিরিবিলি এক শহর ।শত বছরের পুরানো চার্চ, পাথর বিছানো খোলামেলা চত্বর, লাল রংগা টালি আর লালচে ইটের ছোট ছোট কাঠের ঘরবাড়ি -সামনে ক্রিসমাস বলে বেশীর ভাগ বাড়ির জানালায় ছোট ছোট ল্যাম্প সারা রাত ধরে জ্বলে,ছোট ছোট চমৎকার সব আলোজ্বলা দোকান, শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ছোট্ট খাল, তার দুপাশে গড়ে ওঠা ছিমছাম সব ক্যাফে - সবকিছুতেই একটা সেই পুরোনো ইউরোপের ছাপ; হঠাৎ হঠাৎ মনে হয় যেন একলাফে দু-তিনশ' বছর পেছনে চলে এসেছি ! নিরিবিলি জনশূণ্য টুকটাক আলোজ্বলা রাস্তায় হাঁটতে দারুণ লাগছিল ! আমিও হেঁটে হেঁটে বেড়াচ্ছিলাম কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই - অলিগলি যেদিকে ভাল লাগছিল । পকেটে গুগল ম্যাপ আছে । হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো এক কাপ গরম কফির জন্য মনটা আনচান করছে । কিছুক্ষণ পর দেখলাম দুরে একটা ক্যাফে থেকে তখনোও আলো ভেসে আসছে । হঠাৎ মনে হল আমি আর হয়ত আর ঠি ক মত ডরমেটরী তে পৌঁছাতে পারব না. পাশ দিয়ে গা ঘেষে একটা গাড়ী গেল! কিছুখন পরে ই দেখলাম একজন এগিয়ে কাছে আসল. তাকে দেখে কিছুটা সাহস পেলাম.জানতে চাইল কেন দাড়িয়ে আছি.অকপটে সব স্বীকার করলাম.জানতে চাইল কফি খাব কিনা,যদিও সে অচেনা এক জন ছিল,কিন্তু ঐ সময় তার থেকে বেশী আপনজন আর কেউ ছিলোনা. ক্যাফে তে ঢুকলাম, ক্যাফেটা বেশ জমজমাটই বলা চলে - সাথে দেখলাম এক কোনায় বসে কয়েকজন লোক নানা ধরণের ইন্স্ট্রুমেন্ট নিয়ে মিউজিক বাজাচ্ছে । কিছু ইন্স্ট্রুমেন্ট আমার চেনা যেমন ভায়োলিন, গিটার কিন্তু কিছু আবার অদ্ভুদ দেখতে । তবে সব মিলিয়ে সুরটা দারুণ উঠছিল । অনেক কিছু নিয়ে গল্প হল.সে এখানে পড়তে এসেছে পাশাপাশি চাকরি ও করছে .যদি ও হোটেল তার বাসার বিপরীত দিকে তারপরে ও আমাকে যাবার সময় নামিয়ে দিয়ে গেল .সেই রাতের আবেশে আমি তার কাছে যোগাযোগ করার কোন মাধ্যম ই মনে করে চেয়ে নিলাম না.এর দুই দিন পরে আমার ফ্লাইট ছিল ইচ্ছা থাকা সত্তে ও আমি তাকে আর কোনদিন খুঁজে পাবোনা সেটা আমি আমার মন কে বুঝালাম. ঠিক করলাম জীবনে আর বিয়ে নামক কোন সম্পর্কের সাথে জড়াব না.ইদানীং খুব ক্লান্ত লাগে।মন জুড়ে শুধুই হতাশা।অথচ চারিদিকে উৎসব। ঠিক তার ৩ বছর পর কিন্ত মায়ের চাপাচাপী তে বাধ্য হলাম. পাত্রপক্ষ আসবে আজকে. আমাকে যেতে বলা হল. গেলাম কিন্তু মুখ তুলে দেখলাম না.কেনো দেখব!চাপা অভিমান গুলো আমাকে শান্তি দিচ্ছিল না. ভিতরে চলে আসলাম, সে দেখা করতে চাইছে.ইতস্তত আমি সে সামনে এসে দাড়াল আমি কিছুটা হতভম্ব, অপ্রত্যাশিত পুরো ব্যপারে এবং সাথে অদ্ভুদ এক আনন্দে মনটা সত্যিই ভিজে উঠল! হালকা হেসে বলল 'মন খারাপ?? অভিমানে চোখ ভিজে উঠল,খুব সাধারণ একটা মুখের জন্য অসাধারণ রকমের মায়া লাগা কাজ করাকে বোধহয় ভালোবাসা বলে। টেবিলের কাছে এসে আবারোও সেই নাটুকে ভংগীতে আমাকে বলল”তোমার চোখে চাইলে হৃদয়ের এই অকারন অস্থিরতা এক নিমিষেই কেটে যায়। প্লীজ,will you marry me?? মানুষই মনে হয় একমাত্র প্রাণী যে কিনা সম্পূর্ণ অজানা-অচেনা কাউকে এমন ভাবে অপ্রত্যাশিত আনন্দ উপহার দিতে পারে ! সৃষ্ঠিকর্তাও কি অদ্ভুদ ভাবেই না আমাদের জন্য জীবনের আঁনাচে-কানাচে খুশীর ব্যবস্থা করে রাখেন ! কে জানত বিদেশ-বিভুইয়ে পরিচয় হওয়া একজন আজকে আমার জীবন সঙ্গী ! জীবনের গল্পগুলো মাঝে মাঝে কি অদ্ভুতই আর অপ্রত্যাশিতই না হয় .পরে সে আমাকে জানালো আমাকে খুঁজে পেতে তাকে অনেক কাঠ খড় পুড়াতে হয়েছে..